ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সদর উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি মোঃ জসিম-(৩৫) এর বিরুদ্ধে স্বর্ণালংকার ছিনতাইসহ পারভীন আক্তার নামে গৃহবধূকে মারধোর করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত মোঃ জসিম সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের হাবলাউচ্চ গ্রামের মোঃ বাবুল মিয়ার ছেলে।
এ ঘটনায় হামলার শিকার গৃহবধূ পারভীন আক্তার বাদি হয়ে গত বুধবার বিকেলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি মোঃ জসিম, তার ছোট ভাই মোঃ সুজন-(২৫) ও তার পিতা মোঃ বাবুল মিয়াকে আসামী করে ( তিন জনের বিরুদ্ধে) সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার বাদি পারভীন আক্তার কসবা উপজেলার কাঞ্চনমুড়ি গ্রামের আবদুল মোতালিবের স্ত্রী।
মামলার এজাহারে পারভীন আক্তার বলেন, তিনি গত সোমবার (২৪ মে) তার অন্তঃসত্বা কন্যা নারগিস আক্তার পিংকিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের কাউতলী ডায়াবেটিক সেন্টারে চিকিৎসা করিয়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কাউতলী মোড় থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকসা রিজার্ভ করে নিজ বাড়ি কসবা উপজেলার কাঞ্চনমুড়ি যাওয়ার সময় অজ্ঞাতনামা যাত্রীবেশী এক যুবক জরুরী প্রয়োজনে কসবা যাওয়ার কথা বলে তার ভাড়া করা সিএনজিচালিত অটোরিকসায় উঠতে চাইলে তিনি মানবিক কারনে ওই যুবককে অটোরিকসায় উঠার অনুমতি দেন। পরে ওই যুবক অটোরিকসায় উঠে চালকের পাশের সীটে বসেন।
এক পর্যায়ে তাদেরকে বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিকসাটি সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের রাধিকা এলাকায় পৌছলে যাত্রীবেশী অজ্ঞাতনামা ওই যুবক অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পারভীন আক্তারের গলায় থাকা আড়াই ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন নিয়ে দৌড় দেয়।
এ সময় পারভীন আক্তার এলাকাবাসীর সহায়তায় ওই যুবককে আটক করেন। এ সময় রাধিকা বাজারের ব্যবসায়ী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাবেকলীগের সহ-সভাপতি মোঃ জসিম, তার ভাই সুজন ও পিতা বাবুল মিয়া তাদের সহযোগীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের (ছিনতাইকারী) পক্ষে অবস্থান নেন।
এক পর্যায়ে তারা গৃহবধূ পারভীন আক্তার ও তার অন্তঃসত্বা কন্যা নারগিস আক্তার পিংকিকে মারধোর করে তাদের কাছে থাকা প্রায় সাড়ে সাত ভরি ওজনের বিভিন্ন স্বর্ণালংকার ও নগদ ৩৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
পরে পারভীন আক্তার ৯৯৯ ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে তাদেরকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করায়। এজাহারে গৃহবধূ পারভীন আক্তার আসামীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।
এদিকে গৃহবধূকে মারধোরের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পরলে এনিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ-সভাপতি ও মামলার প্রধান আসামী মোঃ জসিমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার দোকানের সামনে হঠাৎ দেখতে পাই এক যুবককে গণধোলাই দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ সময় আমি, দোকানে থাকা আমার ভাই, বাবাসহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে গণধোলাইয়ের হাত থেকে ওই যুবককে রক্ষা করি। আমি ওই যুবককে চিনতাম না। তিনি বলেন, ওই যুবককে রক্ষা করতে গিয়ে ওই মহিলার সাথে আমার ধাক্কা-ধাক্কি হয়েছে। মারধোরের কোন ঘটনা ঘটেনি।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান শিপলু বলেন, বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতাদেরকে অবহিত করা হয়েছে। তাদের নির্দেশনা পেলে দলীয় ভাবে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লোকমান হোসেন বলেন, বিষয়টি অবগত হয়েছি। অভিযুক্ত জসিমকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কারের জন্য সদর উপজেলা কমিটিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply