স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
বিষ মিশিয়ে মিষ্টি দেয় প্রেমিক, সেগুলো সন্তানদের খাওয়ান মা, এতেই মৃত্যু হয় দুই ভাইয়ের। এমনটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান এসপি আনিসুর রহমান।
তিনি আরো বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ইসমাঈল হোসেন খানের ছেলে ইয়াছিন খান (০৭) ও মুরসালিন খান (০৫) নাপা সিরাপ খেয়ে মারা যাওয়ার অভিযোগ তুলেন শিশুদের মা লিমা বেগম। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে নাপা সিরাপ খেয়ে নই, মায়ের পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লাহ সামসুর বিষ মেশানো মিষ্টি খেয়েই মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন ঘাতক মা লিমা বেগম।
সংবাদ সম্মেলনে এসপি আনিসুর রহমান জানান, নিহত শিশুদের বাবা সিলেটের একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন। সংসারের স্বচ্চলতার জন্য মা লিমা বেগম স্থানীয় একটি চাতাল মিলে কাজ নেন। সেখানে শ্রমিক সর্দার সফিউল্লাহ সামসুর সাথে পরিচয় হয় লিমা বেগমের। পরিচয়ের সূত্র ধরেই পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন সফিউল্লাহ ও লিমা। সম্প্রতি লিমা বেগমকে বিয়ের প্রলোভন দেখান সফিউল্লাহ। তাতে শর্ত জুড়ে দেন লিমাকে। দুই সন্তানকে শেষ করে আসলেই লিমাকে বিয়ে করবেন সফিউল্লাহ। শর্তানুযায়ী ঘটনার দিন বিকেলে ৫ টি মিষ্টিতে বিষ মিশিয়ে লিমার হাতে তুলে দেন পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লাহ। পরে বিষ মেশানো মিষ্টি শিশু সন্তান ইয়াছিন ও মুরসালিনকে নিজ হাতে খাওয়ান মা লিমা বেগম। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকেই শ্বাশুড়িকে দিয়ে স্থানীয় একটি ফার্মেসী থেকে নাপা সিরাপ আনান লিমা বেগম। যা সন্ধ্যায় মিষ্টি খাওয়ানোর কিছুক্ষণ পরই এক চামচ করে নাপা সিরাপ খাওয়ান ঘাতক এ মা। নাপা সিরাপ খাওয়ানোর ১০/১৫ মিনিটের পর থেকেই শিশু দুটি বমি করতে থাকে। সাথেসাথেই স্থানীয় ফার্মেসী ও পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সর্বশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন লিমা বেগম ও প্রতিবেশীরা। পরে রাতেই দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। আর মৃত্যুর কারণ হিসেবে “নাপা সিরাপ” এর নাটক শুরু করেন মা লিমা বেগম।
এসপি জানান, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন গ্রেপ্তারকৃত লিমা বেগম। যা আদালতেও স্বীকার করেন লিমা। তিনি বলেন, বিজ্ঞ আদালত লিমা বেগমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
আনিসুর রহমান আরো জানান, ঘটনার পরপরই এর রহস্য উদঘাটনে পুলিশ ব্যাপক নজরদারি শুরু করেন। এর মধ্যে নিহত শিশুদের মা লিমা বেগমের মোবাইল নাম্বারটির কল রেকর্ড সংগ্রহ করেন পুলিশ। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে লিমা বেগমের কল লিস্ট ও কল রেকর্ড সংগ্রহ করে পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লাহ সামসুর সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত হন পুলিশ। সেই সূত্র ধরেই বৃহস্পতিবার রাতে আশুগঞ্জ দূর্গাপুর নিজ বাড়ি থেকে লিমা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইতিমধ্যে এঘটনায় নিহত শিশুদের বাবা ইসমাঈল হোসেন খান বাদী হয়ে আশুগঞ্জ থানা একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অপর আসামি পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লাহকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান এসপি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন, জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ইনচার্জ (ডিআই-০১) ইমতিয়াজ আহমেদ, আশুগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ রহমান ও জেলায় কর্মরত প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা।
উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ রাতে শিশু দুটির মৃত্যুর ঘটনায় নাপা সিরাপ খাওয়ানোর কারনে মৃত্যু হয়েছে দাবী করা হলে ঔষধ প্রশাসন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন এর পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে নাপা সিরাপের ঐ ব্যাচটি উদ্ধার করে তার মান সঠিক আছে কিনা জানতে ঢাকায় পাঠানো হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষায় নাপা সিরাপ এর মান সঠিক পাওয়া যায় বলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রেস ব্রিফিং করে জানানো হয়।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply