সংবাদ শিরোনাম
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরকে সম্প্রসারিত করে পরিকল্পিত নগরায়ন করা হবে: গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী মোকতাদির চৌধুরী এমপি কমলগঞ্জে শমশেরনগরে রেলপথ ঘেষে জমে উঠে অবৈধ পশুর হাট; দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বাংলালিংক ও হুয়াওয়ের চুক্তি ডেঙ্গু ঠেকাতে সোমবার থেকে মাঠে নামছে ডিএনসিসি অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে আটকে পড়া ১৩ বাংলাদেশী দেশে ফিরেছেন শেষ হলো সাহিত্য একাডেমির ৭ দিনব্যাপী “বৈশাখী উৎসব।। সচিব খলিল আহমদকে বৈশাখী উৎসব সম্মাননা প্রদান সরাইলে উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপির প্রার্থী তপু লস্কর নবীনগরে তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষে একজন নিহত ও আহত-৩।। আটক-৪ কমলগঞ্জে নিরাপদ সড়ক চাই’র আইডি কার্ড বিতরণ ও পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত সাহিত্য একাডেমির বৈশাখী উৎসবের ৫ম দিনে নির্বাচিত গ্রন্থের প্রকাশনা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত

বৈচিত্রের মানবজীবন : রং বেরং; আল আমীন শাহীন

বৈচিত্রের মানবজীবন : রং বেরং; আল আমীন শাহীন

মানবজীবন বৈচিত্রময়, জন্মিলে মৃত্যুর স্বাদ নিতেই হবে। জন্ম থেকে শেষ জীবন, সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনা আর যোগ বিয়োগের। সিয়াম সাধনার পর অনাবিল ঈদের সুখ মানবজীবনে রঙ্গ ছড়ায় তবে কারো কারো ক্ষেত্রে ভিন্ন রকম। এবার ঈদ অন্যরকমই কেটেছে। একটি পরিবারে হাসপাতালে কেউ চিকিৎসাধীন থাকলে ঈদের সে রঙ্গ টের পাওয়া যায় না। এবার ঈদে তেমন রঙ্গ ছিল না মনে। শ্বশুড় অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আইসিইউতে। উনার বিষয়টি সারা মনে। ৮৫ বছরের একজন ভাটিবেলার মানুষ প্রিয় সন্তানদের দেখতে আমেরিকা থেকে ছুটে এসেছেন। ঘন্টার পর ঘন্টা বিমানে চড়ে, পায়ে হেঁটে মাতৃভ্থমিতে ফিরে আসা মানুষটি দিন দিন নিস্তেজ হয়ে হাসপাতালে । ফ্যাল ফ্যাল করে শুধু তাকিয়ে থাকেন। অনুভ্থতিও মুখে বলতে পারেন না। কখন কি হয় সেই টেনশনে পরিবারের সবাই।
অন্যান্য বছর ঈদের দিন ঈদ পরবর্তী সময়ে প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করেছি। এখানে ওখানে বেড়ানোটা ছিল প্রতিবছরের নিয়মিত রুটিন। এবার হয়নি। ঈদের দিন প্রয়াত প্রেস ক্লাব সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামির বাসায় গিয়েছিলাম শুধু। জামি ঈদের দিন দু চার বার ফোন করতো । এবার সেই ফোন বাজেনি। জামির শূন্যতাটা টের পাচ্ছি তীব্র ভাবে দিন দিন।
পথে বের হলে শুভাকাঙ্খীদের কুশলাদী বিনিময়ের সৌভাগ্যটা এবারও ছিল। সবাই বলেছে কেমন আছি, উত্তরে বাধ্য হয়েই বলতে হয়েছে, ভালই আছি, মুখের হাসিটা ধরে রাখতে হয়েছে। পোষাকে আষাকে কিছুটা রঙ্গহীন বুঝতে পেরেছি শ্রদ্ধেয় মোতালিব ভাইয়ের সাথে মসজিদ রোডে দেখায় , তিনি বল্লেন এমন চলবে না, এই জুতা, এই পাঞ্জাবী নয়, রঙ্গিন মানুষটা রঙ্গিন থাকতেই হবে। বদলাতে হবে এসব, বদলানোর অফারও করলেন, খুশী হলাম। মানুষ আমাকে খুব ভালোবাসে উনার কথায় এর প্রমাণে মনে সুখের রঙ্গ।
আমি আমার কথা ভাবছি। অন্য দিকে শ্রদ্ধার মানুষ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিও। কিছুদিনের ব্যবধানে উনার প্রিয় ছোট বোন এবং ভাবীকে হারিয়েছেন। শোকে মুহ্যমান। বিশাল বিত্ত শালী মানুষটিও এবার শোকে অন্যরকম।
অফিসে এসেছি এক সহকর্মী বল্লো ঈদের পোসাক তার গায়ে চড়েনি। ঈদ মৌসুমে এবার পাকা ধানের মৌসুম , ফসল তুলতে বাবা মা গেছে বাড়ি, সেখানে মাঠে কাজ করছেন তারা । সেই ভাবনায় সুখ আর কতটুকু হয়। পথের পাহাড়াদার দেখা হলো, তিনি বল্লেন, ঈদের রাতেও মার্কেট পাহাড়া দিতে হয়েছে। একজন সেনা সদস্যের সঙ্গে দেখা হলো , তিনি বল্লেন , ঈদের পর বাড়িতে এসেছেন, ডিউটি করেছেন ঈদের দিনে দেশের স্বার্থে। পথের পাশে একজন হকারের সঙ্গে দেখা , তিনি জানালেন বাড়ি নরসিংদী। পথ ফাকা তাই ঈদের দিনেও পসরা সাজিয়েছেন সংসারের চাহিদা মেটাতে। রিক্সাচালক মতি মিয়া, প্রিয় মানুষ , ঈদের দিনেও ঘর্মাক্ত, ক্লান্ত। তবে ঈদের ভাড়া কিছু বাড়তি পেয়েছে তাই তিনি খুশী কিছুটা।
ফাজু ভাই। দীর্ঘ ৩০ বছর পর দেখা।  প্রথমে চিনতে পারিনি। দাঁড়িতে মুখ ভরা, শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত ভাষা চত্বরে বসে ছিলেন, পাশে উনার খালাতো ভাই আমাকে ডেকে উনার সামনে দাঁড় করালেন, বল্লেন বাড়ি দেওড়া। তিনিও জিজ্ঞেস করলেন , দেওড়া কার বাড়ি, বিস্তারিত বল্লাম, উনিও প্রথমে ঠিক চেনেন নি। উনার হাসি, কথার ডঙ্গ , চাহনী, কি যেন , কাকে যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে। এবার আমি উনার জানতে চাইলাম। মনে মনে হাসছি, আমি চিনেছি, চিনার সাথেই বুকের স্পন্দন কেমন যেন বিচিত্র হয়ে উঠলো, চোখ ভিজে যাচ্ছে, সামলে নিচ্ছি। বল্লাম শাহবাজপুরের ফাজু ভাইকে চেনেন, তিনি বল্লেন আমিই তো ফাজু। সিনেমার সেই অনেক বছর পর হারিয়ে যাওয়া মানুষকে ফিরে পাওয়ার মতো দৃশ্য। বুকে বুকে মিশালাম, দেখলাম বুকটা উনার কাঁপছে।বুকে বুক মিশানো পরে চোখে চোখ হতেই দেখি উনার চোখেও খুশীর অশ্রু। ছোটবেলায় শাহবাজপুরে ঈদ করতাম । ফুফু ছিল ফুফাত ভাই বোন ছিল, এখন নেই , ফুফুদের পেছনের ঘরটি ফাজু ভাইদের। আমার ফুফুর ঝা ছিলেন শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক মুসা স্যারের আপন বোন। স্কুলের পাশে খালের ওপাড়ে মিঞাদের বিশাল বাড়ি, শ্রদ্ধেয় শাব্বির মিঞার বাড়ির পশ্চিমে তিনটি বাড়ির একটি আমার ফুফুর বাড়ি, একটি ফাজু ভাইদের। শ্রদ্ধেয় আহসান উল্লাহ মাস্টারের বাড়ি , সবাই চিনে। ঈদে সেখানে গেলে ফাজু ভাই খুব আদর করতেন দারুণ রসিক মানুষ। কত আপন, কত কাছের, অথচ বৈচিত্রের জীবনে ফাজু ভাইকেই প্রথম দেখায় চিনলাম না, তিনিও আমাকে। আহারে জীবন বদল, জীবনের রঙ্গ বদল। সময়ের সাথে বদলে যাওয়া জীবনের ব্যতিক্রম অধ্যায়। তবে জীবন থেমে থাকে না, জীবন চলে, মানুষ আসে মানুষ যায়, রঙ্গ আসে রঙ্গ হারায় মানব জীবন ধারায়।

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com